অনলাইন ডেস্ক:
নিজে সরকারি দলের নেতা হিসেবে পরিচিত। বড় ভাই সাবেক চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি। আরেক ভাই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। তাছাড়া এলাকায় থানার দালাল হিসেবে বেশ ভালোই পরিচিতি রয়েছে তাদের। তার ওপর নবীরুল আবার কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ভানী ইউনিয়নপরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউ পি সদস্য । এলাকার লোকজন জানায় নিজ গ্রাম সূর্যপুরের সব বখাটে আর ছিনতাইকারী গ্রুপের সর্দার নবীরুল মিয়া। তাই দাপট তো এলাকায় রয়েছেই। বড় নেতা আর পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে বেপরোয়া অপরাধে জড়িত নবীরুল মেম্বার নিজের এলাকায় নিজের তৈরী আইনেই চলে তার বিচার আচার দেন দরবার।
তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে অপদস্ত ও ইজ্জত হারনোর ভয়ে এলকার অনেকেই মুখ ও খুলতে চায় না সহজে। বহু অপকর্ম ধামাচাপা দিতে তার বা হাতের ইসারাই যথেষ্ট সূর্যপুর গ্রামে। তবে কুমিল্লার প্রত্যন্ত মফস্বল এলাকা সূর্যপুর গ্রামের লোকজন মুখ খুলতে শুরু করেছে নবী মেম্বারের কুকর্মের বিরুদ্ধে।
গ্রামের স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ( নাম বলা যাবে না শর্তে) বলেন, ‘এই তো ২য় রমজানে দিন সূর্যপুর সড়ক দিয়ে বাইকে যাওয়ার সময় তরুণ তরুণীকে আটক করে নবী ও তার ছিনতাইকারী বাহিনী বখাটেরা। ছেলেটির বাড়ি মুরাদনগর আর মেয়েটি ভানী ইউপি এলাকার সাহারপাড় এলাকার। রাস্তা থেকে ধরে এনে পরে নানা রকম অসভ্যতা করে দুজনের সাথেই। পরে ছেলে মেয়ে দুটোর হাতে কনডম দিয়ে ছবি তোলে। এরপর নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের মোবাইল ফোন এবং বিকাশে ৫ হাজার টাকা আদায় করে তাদের কাছ থেকে। এরপর কোন রকমে ছাড়া পেয়ে বাড়ি যায় তারা। যা এলাকার অনেকেই দেখেছেও জেনেছেও। এমন ঘটনা হরহামেশাই দেখা যায়। নবী মেম্বার তো এলাকায় নিজের আদালত চালু করেছে। নবীরুলের গুন্ডা বাহিনীর ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না । তারা কাছে অস্ত্র আছে এটা গ্রামের প্রায় সকলেরই জানা। এলাকার যত লাফাংগা মাদকসেবী আর ইয়াবার কারবারি আছে সব নবী মেম্বারের সাগরেদ।’
নবীরুল মেম্বারের দ্বারা নানা ভাবে হয়রানীর শিকার সূর্যপুর গ্রামের আরেক নারী বলেন, গত ২৫/২৬ দিন আগে নবীরুল ও তার এক সহযোগী মিলের কর্মজীবি নারী রহিমা বেগমের বোনের মেয়েকে রাস্তা থেকে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে কয়েক দফায় ধর্ষণের চেষ্টা করে করে নবী মেম্বার ও তার এক সহোযোগী। মেয়েটিকে আটকে রেখে দীর্ঘ সময় তার গায়েও হাত দেয় তারা। গরিব অসহায় ঐ নারী ভয়ে কাউকে বলার সাহস পায় নি।
সূর্যপুর গ্রামেরই আরেক জন বলেন, ‘ ভাই এই ওয়ার্ড এলাকার প্রকৃত গরিব ও অসহায় বিধবারা ভাতার কার্ড না পেলেও এলাকার কোন নারীরা সরকারি ভাতার এসব কার্ড পেয়েছে লম্পট মেম্বারের কাছ থেকে তা সকলের জানা। তাদের একটা তালিকা দেই আপনাকে, যাচাই করে দেখবেন একটু’।
গত কয়েকদিন আগে সূর্যপুর উত্তরপাড়া এলাকার বিল্লাল হোসেন নামের এক যুবককে স্থানীয় এক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে নবীরুল মেম্বারের বাহিনী। জরিমানা ধার্য করে নবীরুল মেম্বার।
উল্লেখ্য কুমিল্লার দেবিদ্বারে এক তরুণীকে (২০) ভয়ংকর সিনেমা স্টাইলে পালাক্রমে গণধর্ষণের অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নবীরুল কে আটক করেছে দেবিদ্বার থানা পুলিশ।
উপজেলার ভানী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের নবীরুল ইসলাম নবী (৩০)। সে সূর্যপুর গ্রামের মৃত মো. সামসুল হকের ছেলে।
ওই তরুণী শুক্রবার দুপুরে দেবিদ্বার থানায় একটি লিখিত গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছেন। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওইদিন বিকাল সাড়ে ৩টায় ওই ইউপি সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।
তরুণী লিখিত অভিযোগে জানান, চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি দুপুরে তিনি তার স্বামী’কে নিয়ে ভানী ইউনিয়নের সূর্যপুরের রাস্তা দিয়ে স্বামীর বাড়ি মুরাদনগর উপজেলার প্রান্তি গ্রামে যাচ্ছিলেন। পথে ইউপি সদস্য নবীরুল ইসলামের নেতৃত্বে শামিম, আকাশ, পাখিসহ অজ্ঞাত আরও ৮/৯ জন তাদের গতিরোধ করে। তারা তরুণীর স্বামীর পরিচয় জানতে চায়।
তারা দুজন নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিলে ইউপি সদস্য নবীরুল তাদের (স্বামী-স্ত্রীর) বিয়ের কাবিননামা দেখতে চান। পরে ওই তরুণীর স্বামী বিয়ের কাগজপত্র দেখালে ওই ইউপি সদস্য ওই কাগজপত্র দেখে ভূয়া কাগজপত্র বলে আখ্যায়িত করে এবং বলে ওই কাগজপত্রে হবে না। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে নবীরুলের সঙ্গে থাকা আকাশ নামে এক যুবক ওই তরুণী ও তার স্বামীকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে ইউপি সদস্য নবীরুল ইসলাম ২০ হাজার টাকা দিলে তা সমাধান করে দেবে বলে প্রস্তাব করে। পরে ওই তরুণীর স্বামী টাকার ব্যবস্থা করার জন্য স্ত্রীকে ইউপি সদস্য নবীরুলের হেফাজতে রেখে চলে যান।
ওইদিন সন্ধ্যায় টাকা নিয়ে আসেন তরুণীর স্বামী। ২০ হাজার টাকা নেওয়ার পর স্ত্রীকে রেখে স্বামীকে নিজের বাড়ি প্রান্তি গ্রামে চলে যেতে বলেন ওই ইউপি সদস্য। তার হেফাজতে রেখে ওই তরুণীর বাড়ি কুমিল্লার ছোটরায় এলাকায় পৌছে দিবে বলেও জানায় ওই ইউপি সদস্য। পরে স্বামী প্রাণভয়ে তার নিজের বাড়ি চলে গেলে ইউপি সদস্য নবীরুল ইসলাম শামিম, পাখি, আকাশসহ আরও কিছু অজ্ঞাত যুবকের হাতে ওই তরুণীকে তুলে দেয়। তারা তরুণীকে ওই রাতেই বাড়ি পৌছে দেওয়ার কথা বলে ভানী ইউনিয়নের ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অজ্ঞাত একটি জঙ্গলে নিয়ে যায়।
পরে ইউপি সদস্য নবীরুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে কথা বলে আকাশ। ফোনে তরুণীসহ তাদের অবস্থানের জায়গার নাম জানানো হয় ইউপি সদস্য নবীরুলকে। পরে ইউপি সদস্য নবীরুল জঙ্গলে এসে ওই তরুণীকে দুইবার ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে ইউপি সদস্য নবীরুল ভুক্তভোগী তরুণীকে পাখি, আকাশ ও শামীমদের হাতে তুলে দিয়ে বাড়ি চলে যায়। পরে ৭/৮ জন যুবক ওই তরুণীকে পুনরায় পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। পালাক্রমে ধর্ষণ শেষে ওই তরুণীকে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের এক পাশে ফেলে পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী বলেন, ‘মেম্বারসহ মোট ৯জন ধর্ষণকাজে জড়িত ছিলো। আমি তাদের মুখে একে অপরকে ডাকার নাম শুনে ২/৩ জনের নাম জানতে পেরেছি। বাকিদের নাম বলতে পারবো না।’ ওই তরুণী আরও বলেন, ‘আমি চিৎকার করার চেষ্টা করলেও করতে পারেনি। তারা আমার হাত-মুখ চেপে ধরে রেখেছে। এর আগে আমার স্বামীর অনুপস্থিতেতে আমার হাতে কনডম দিয়ে আমাকে খারাপ মেয়ে বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য মোবাইলে ভিডিও করা হয়।’
এ ব্যাপারে ভানী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান মুকুল বলেন, ‘ঘটনার প্রায় ৪ মাস পর জানতে পারলাম। নিশ্চয়ই এখানে কোন চক্রান্ত লুকিয়ে আছে। ওই তরুণী এতদিন কেন কালক্ষেপণ করলেন? সত্যিকারে যদি এ কাজে জড়িতের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে।’
এ ব্যাপারে দেবিদ্বার থানার ওসি মো. জহিরুল আনোয়ার জানান, ‘ইউপি সদস্য নবীরুলকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণ কথা প্রাথমিক ভাবে স্বীকার করেছে। ভুক্তভোগী তরুণীর মেডিকেল রিপোর্টের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত আরো ২ আসামী সূর্যপুর গ্রামের আব্দুল হাকিম এর ছেলে আকাশ (৩০) ও মোঃ শহিদ খাঁন প্রকাশ পাখি (৩২), পিতা মোঃ বাবুল খাঁন, গ্রাম- পাহাড়পুর (মনোয়ারের বাড়ী) সহ মোট ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। শনিবার সকালে ১৬৪ ধারায় নিজের অপরাধ স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি প্রদাণ করেছে। জড়িত অপর আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Leave a Reply