অনলাইন ডেস্ক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর রবিবার (১১ অক্টোবর) রাতে ফেসবুক লাইভে তাদের বিরুদ্ধে তিন সপ্তাহ আগে করা ধ’র্ষণ মামলা নিয়ে কথা বলেন। সেখানে তিনি ওই ছাত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে নারীনেত্রী ও মানবাধিকার কর্মীরা। এ অভিযোগের বিষয়ে নুরের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে জার্মানভিত্তিক বাংলা গণমাধ্যম ডয়েচ ভেলে।
নূর বলছেন, ‘দুশ্চরিত্রাহীন, মানে তাকে চরিত্রবান বা চরিত্রহীন কোনোটাই বলিনি। তিনি অন্যের প্ররোচনায় এসব কাজ করছেন।’ এর জবাবে ধর্ষণের মামলা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী বলেন, ‘নূর আগেই আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিলে। আর এখন ফেসবুক লাইভে আমাকে দুশ্চরিত্রা বললো। এতেই বোঝা যায় যে, তার আসল উদ্দেশ্য কী?’
অন্যদিকে, নারীনেত্রী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বাংলা ভাষায় ‘দুশ্চরিত্রহীন’ শব্দই নেই, নূর আসলে কৌশলে দায় অস্বীকারের অপচেষ্টা করছেন।
নূর ওই ফেসবুক লাইভে তাদের বিরুদ্ধে তিন সপ্তাহ আগে করা ধর্ষণ মামলা নিয়ে কথা বলেন৷ তিনি বলেন, ‘তদন্ত করে দেখেছি, ছাত্র অধিকার পরিষদের আব্দুল্লাহ হিল বাকি, নাজমুল হুদা ও সাইফুল ইসলাম এবং আমার এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই।’
গত ২০ সেপ্টেম্বর লালবাগ থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী নুরুল হক নূর ও ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন। নূরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ধর্ষণে সহযোগিতার। অভিযুক্তদের মধ্যে মামুন ও সোহাগকে ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ওই ছাত্রী ৮ অক্টোবর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসামিদের গ্রপ্তারের দাবিতে অনশন শুরু করেন।
শনিবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেলে চিকৎসা দেয়া হয়। চিকিৎসার পর আবার অনশন শুরু করেছেন তিনি। মামলার তিন সপ্তাহে কোনো আসামিকে গ্রেফতার না করলেও অনশন শুরুর পর ১১ অক্টোবর দুই আসামি ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম এবং ঢাবি শাখার সহ-সভাপতি নাজমুল হুদাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এ প্রসঙ্গে ওই ছাত্রী বলেন, ‘ছয়জন আসামিকেই গ্রেপ্তার করতে হবে। সব আসামিকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমি অনশন চালিয়ে যাবো।’
নূর যে এখন ‘দুশ্চরিত্রাহীন’ বলেছেন, ‘দুশ্চরিত্রা’ বলেননি বলে একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন সে প্রসঙ্গে অনশনরত ছাত্রী ছাত্রী বলেন, ‘আসলে সে কী বলেছে তা সবাই জানে। শুনেছেন। কোন প্রেক্ষাপটে বলেছে তা-ও স্পষ্ট৷ ব্যাখ্যা দিলেই তো সব ঠিক হয়ে যায় না।’
নূর বলেন, ‘তাকে আমরা পরোক্ষভাবে চরিত্রবান বা চরিত্রহীন সেটা আমি বুঝাইনি। তাকে খারাপ মেয়ে বলিনি। তিনি যে কারো প্ররেচনায় এটা করছেন আমি সেটা বুঝাতে চেয়েছি। এই অনশনের সময় তিনি ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী বেষ্টিত ছিলেন। ছাত্রলীগের প্ররোচনায় তিনি এসব করছেন।’
যে তদন্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিও ছিলেন সেই তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্তে নাজমুল হাসান সোহাগের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছি৷ হাসান আল মামুনের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা তা আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি৷ আর মামুনের সাথে আমরা যোগাযোগও করতে পারিনি৷ কিন্তু আমিসহ বাকি চারজনের ওই ঘটনার সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই৷”
তবে ধর্ষণ মামলার আসামিদের প্রকাশ্যে বিবৃতি দেয়া বা বক্তব্য রাখার সুযোগ থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজ৷ তিনি বলেন, ‘মামলা হয়েছে৷ তদন্ত হবে৷ আদালতই দেখবে কে দোষী আর কে নির্দোষ৷ নুর তাকে যে দুশ্চরিত্রা বলেছেন, সেটা একটি অপরাধ৷ আমাদের এখানে এটা চলে আসছে৷ কোনো নারী ধর্ষণ বা যৌনহয়রানির অভিযোগ করলেই এক গ্রুপ তার চরিত্র নিয়ে কথা বলা শুরু করে৷ তাদের উদ্দেশ্যই থাকে অপরাধীকে আড়াল করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (নূর) যদি এখন নতুন ব্যাখ্যা দেন, দুশ্চরিত্রা নয়, দুশ্চরিত্রাহীন বলেছেন, তা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়৷ এটাও তিনি খারাপ উদ্দেশ্যে করছেন৷ কারণ, তার কথার মোটিভ বোঝা যায়৷ আর বাংলা ভাষায় দুশ্চরিত্রহীন বলে কোনো শব্দ আছে বলে আমার জানা নেই।
Leave a Reply