অনলাইন ডেস্কঃ
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার ওলির সঙ্গে শত্রুতা করে, আমি তাকে আমার সঙ্গে যুদ্ধের আহ্বান করি। আমি বান্দার ওপর যা ফরজ করেছি, তা অপেক্ষা আমার কাছে অধিক প্রিয় কোনো বস্তু নেই, যা দ্বারা আমার বান্দা আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে। আর বান্দা নফল ইবাদতের দ্বারা আমার নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে থাকে, একপর্যায়ে আমি আল্লাহ স্বয়ং তাকে ভাৃলাবাসতে শুরু করি। যখন আমি তাকে ভাৃলাবাসি তখন আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শোনে। তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে।
তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে হাঁটে। সে যদি কিছু চায় আমি তা অবশ্যই দান করি, যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায়, আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দান করি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫০২) হাদিসবিশারদরা বলেন, আল্লাহ ও রাসুলের ভালোবাসা ঈমানের অংশ। সুতরাং তা মুমিনের ওপর ওয়াজিব। কোরআন ও হাদিসের একাধিক বর্ণনা দ্বারা তা প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের বন্ধু আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও ঈমানদারগণ; যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং বিনম্র; আর যারা আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও বিশ্বাসীদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারাই আল্লাহর দল, তারাই বিজয়ী।’
(সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৫৫-৫৬) আল্লাহর বন্ধুদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, তাদের জাগতিক জীবনের বন্ধুত্ব ও দূরত্বের ভিত্তিও হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসা। আল্লাহর বন্ধুগণ ব্যক্তিগত রাগ, ক্ষোভ ও অভিমানের চেয়ে আল্লাহ, তাঁর রাসুল (সা.) ও ইসলাম বড় করে দেখে। ফলে হাদিসের ভাষায় তাদের বন্ধুত্ব ও শত্রুতা উভয়টিই আল্লাহর জন্য হয়ে থাকে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল, তার সঙ্গীগণ অবিশ্বাসীদের প্রতি অতি কঠোর এবং পরস্পর অতি দয়ালু।’ (সুরা : ফাতাহ, আয়াত : ৩৮) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার ও তোমাদের শত্রুদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কোরো না।’
(সুরা : মুমতাহিনা, আয়াত : ১) আয়াতদ্বয়ের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদগণ বলেন, অবিশ্বাসী ব্যক্তি যদি ইসলাম, মুসলিম ও দেশের বিরুদ্ধে পরিচালিত কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত না হয়, তবে অবশ্যই তার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার সুযোগ রয়েছে। তবে সে যদি ইসলাম, মুসলিম ও দেশের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য শত্রুতায় লিপ্ত থাকে, তাহলে তার সঙ্গে কঠোর আচরণ করতে হবে। যেন সে বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। দ্বিতীয়ত, মুসলিমদের প্রতি মুসলমানের আন্তরিকতা ও সৌহার্দ্যের মাত্রা যেন তুলনামূলক বেশি হয়। এটি ঈমানের দাবি। আল্লাহ তাআলা এই হাদিসে তাঁর নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের দুটি উপায় বলেছেন।
তা হলো, ফরজ ও নফল ইবাদত পালন করা। আল্লাহর দরবারে ফরজ হলো সর্বোত্তম ইবাদত। আর নফলের মাধ্যমেও বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে, তবে তার মর্যাদা ফরজের পর। ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘ফরজের পর নফল ইবাদত করার দ্বারা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ হয়। নিশ্চয় নফল ইবাদত বান্দাকে প্রেমিকের স্তর থেকে প্রেমাস্পদের স্তরে পৌঁছে দেয়।’ (মাদারিজুস সালিকিন, পৃষ্ঠা ৬৮) ঈমানের পর নামাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কারণ নামাজে সিজদার সময় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সিজদা করো এবং নিকটবর্তী হও।’
(সুরা : আলাক, আয়াত : ১৯) নবী করিম (সা.) বলেন, ‘বান্দা সিজদারত অবস্থায় তার প্রতিপালকের সর্বাধিক নিকটবর্তী হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১১১) পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাঁর কতিপয় প্রিয় বান্দার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। যেমন—ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভাৃলাবাসেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৫) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ আল্লাহভীরুদের ভাৃলাবাসেন।’(সুরা : তাওবা, আয়াত : ৪) আল্লাহর বন্ধুত্ব লাভের আরেকটি উপায় হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আনুগত্য। আল্লাহ নিজেই এই শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।
ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভাৃলাবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভাৃলাবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩১) আল্লাহর বন্ধুরা আল্লাহর ভালোবাসার পথে অবিচল থাকবে। নিন্দুকের নিন্দা তাদের সত্য পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদার সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ দ্বিন থেকে ফিরে গেলে নিশ্চয় আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনবেন, যাদের তিনি ভাৃলাবাসবেন এবং যারা তাঁকে ভাৃলাবাসবে; তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে; তারা আল্লাহ তাআলার পথে সংগ্রাম করবে এবং নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না; এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন এবং আল্লাহ প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৫৪) মন্তব্য
Leave a Reply