অনলাইন ডেস্ক:
মহাকাশ দৌড়ে দক্ষিণ এশিয়ায় চতুর্থ দেশ বাংলাদেশ। প্রথম বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে এই দৌড়ে শামিল হয়েছে বাংলাদেশ। এতে ভারতের মধ্যে কিছুটা দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছে বলে কয়েকটি গণমাধ্যম দাবি করেছে।
ভারতীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, মহাকাশে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। ভারতের হারানোর কিছু না থাকলেও ট্রান্সপন্ডার ভাড়ার ক্ষেত্রে তাদের একচেটিয়াত্ব আর নাও থাকতে পারে।
এনডিটিভি জানায়, ২০১৭ সালে ভারত সাউথ এশিয়া বা জিএসএটি-৯ নামে একটি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। এর ১২টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি দেয় ভারত। কিন্তু বাংলাদেশ ওই ট্রান্সপন্ডারের যথোপযুক্ত ব্যবহার করেছে কি না তা জানা যায়নি।
মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। ছবি: স্পেসএক্স
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এখন ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয়। কারণ, স্যাটেলাইটসংক্রান্ত সেবা দিতে দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগী মূল্যের বাজার তৈরি হবে, যা আগে ছিল না। এতে ভারতের হারানোর কিছু না থাকলেও কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে স্যাটেলাইট সংক্রান্ত সেবার ক্ষেত্রে।
অপরদিকে দেশটির অপর একটি সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে ভারতের স্পেস রিসার্চ অরগানাইজেশনের সাবেক বিজ্ঞানী প্রাতীপ বসুর বরাতে জানানো হয়, দক্ষিণ এশীয় এলাকায় ভারত এবং চীন হচ্ছে পরাশক্তিশালী দেশ। এর মধ্যে চীন ধীরে এবং কৌশলগতভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রসারিত করছে। এ ছাড়া তারা ধীরে ধীরে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করছে। এমনকি বঙ্গবন্ধু-১-এর ক্ষেত্রে চীন সরকারের সাহায্যের ক্ষেত্রেও দরকষাকষি হয়েছিল। বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট তৈরি ও উৎক্ষেপণের সক্ষমতা থাকলেও ভারত তা হারিয়েছে।
উৎক্ষেপণের আগে ‘বঙ্গবন্ধু-১’। ছবি: স্পেসএক্স
প্রাতীপ বসুর মতে, ভারতকে এখুনি তার মহাকাশ সম্পত্তিকে কূটনৈতিক টুল হিসেবে ব্যবহার করতে হবে চীনের মতো।
ভারতের রকেটারস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা দিভায়েংশু পোদ্দার বলেন, মহাকাশ এখন শুধু বড় দেশের ক্ষেত্রে নয়, ছোট দেশগুলোর জন্যও সুগম হচ্ছে। এর অনন্য উদাহরণ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। তাই বাংলাদেশকে হুমকি বা একটি প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে না দেখে পারস্পরিক বৃদ্ধি এবং শিক্ষার দিক থেকে দেখা দরকার। ভারতকে নিজের ধারণক্ষমতার বিস্তৃতি দরকার। না হলে এটি ভারতের জন্য হুমকি বা প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে।
এদিকে মহাকাশে নিজেদের প্রতিযোগী ভাবছে না বাংলাদেশ—এমনটিই জানিয়েছেন স্যাটেলাইট দেখভালের জন্য সরকারের নবনির্মিত প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই সাব-কন্টিনেন্টে অনেক স্যাটেলাইট রয়েছে। আরও ডিমান্ড তৈরি হবে। তবে এটি প্রতিযোগিতার বাজার তৈরি করবে না। প্রতিযোগিতার বিষয়টি এখানে আসে না।’
এর আগে বক্তব্যে সাইফুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ প্রকল্প বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিয়ে সরকারের আপাতত বাণিজ্যিক আয়ের চিন্তা-ভাবনা নেই।
উল্লেখ্য, দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে রয়েছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার। এর মধ্যে ২৬টি কেইউ-ব্যান্ড ও ১৪টি সি-ব্যান্ডের। ওই ট্রান্সপন্ডারগুলোর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২০টি ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। বাকিগুলো বিভিন্ন দেশের কাছে ভাড়া দেওয়া হবে।
জানা গেছে, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার রয়েছে নিজস্ব স্যাটেলাইট। এর বাইরে পাকিস্তান নিজেদের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের অপেক্ষায়। এ ছাড়া অন্যান্য দেশ এখনো চালু করতে পারেনি নিজেদের স্যাটেলাইট।
অপরদিকে সার্কভুক্ত দেশগুলো ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কাজাখস্তানের কিছু অংশ বঙ্গবন্ধু-১-এর আওতায় পড়বে। এতে বাংলাদেশের স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র: প্রিয়.কম
Leave a Reply