1. jagocomilla24@gmail.com : jago comilla :
  2. weekybibarton@gmail.com : Amit Mazumder : Amit Mazumder
  3. sufian3500@gmaill.com : sufian Rasel : sufian Rasel
  4. sujhon2011@gmail.com : sujhon :
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজঃ
কুমিল্লার কৃতি সন্তান জাতীয় পতাকার নকশাকার  শিব নারায়ণ দাস আর নেই! যেভাবে ৩১ দিন পর মুক্ত হলো ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ! দলীয় মনোনয়ন না থাকায় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে- এলজিআরডি মন্ত্রী সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন : প্রধানমন্ত্রী দেবিদ্বারে অপহরণের পর যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ; সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক দৈনিক আজকের জীবনের আয়োজনে কুমিল্লায় সাংবাদিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিল কুমিল্লায় দরজা ভেঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার ট্রেন দুর্ঘটনা: একসাথে ঈদের কেনাকাটা হলো না ১১ বন্ধুর, না ফেরার দেশে ৩ বন্ধু কুমিল্লায় নিখোঁজের ৩৩ দিন পর বস্তার ভেতর থেকে নৈশপ্রহরীর মরদেহ উদ্ধার কৃষককে অফিস থেকে বের করে দেওয়ায় দুই কৃষি কর্মকর্তাকে বদলি

সুস্থ হতে গিয়ে বোনাস পেলাম ভয়াবহ অভিজ্ঞতা!

  • প্রকাশ কালঃ সোমবার, ১০ আগস্ট, ২০২০
  • ৬৮৪


রবিউল হোসেন।।
ডেঙ্গু, টাইফয়েড ও করোনার উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হওয়ার পর সুস্থ হতে গিয়ে ডাক্তার দেখানো ও ডায়াগনিস্টক সেন্টারের প্রযোজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনার পর বোনাস পেলাম ভয়াবহ অভিজ্ঞতা! গত ৮আগষ্ট পুনরায় ডেঙ্গু, টাইফয়েড পরীক্ষা করে আল্লাহর রহমতে দুটোতেই নেগেটিভ আসে। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মাহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ও কুমিল্লা সদরের চেয়ারম্যান এড.আমিনুল ইসলাম টুটুল ভাইসহ আমার পরিবার ও শুভাকাক্সক্ষীদের।

অমার প্্রাথমিক অবস্থায় কোভিড ১৯(করোনার) উপসর্গ ছিল যেমন-জ¦র, সর্দি, কাঁশি, গলা ব্যথা, বুক বারী মনে হওয়া, শরীরের পিঠে, কাঁদে গোলাপী ও হালকা লাল রংয়ের রেশ উঠা, বমি, খাবারের স্বাদ ও গন্ধ না পাওয়া, ডাইরিয়া, রক্তপাতসহ ডাইরিয়া। ৪র্থ দিন থেকে শরীরের প্রতিটি জয়েন্ট ও হাত-পায়ের পেশীগুলো, চোঁখ ও কপালে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। হাত-পায়ের পেশীগুলো কাজ না করা, হাত-পা, আঙ্গুল মাঝে মাঝে অবশ হয়ে আসা। বমির সাথে রক্ত যাওয়া।

আমাকে সরাসরি (প্রথম) দেখানো মেডিসিন ডাক্তার, আমার লক্ষনগুলো দেখে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেও তরিগরি করে (স্বল্প সময়ে) করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে দ্রুত চেম্বার ছেড়ে পালায়ন করেন। যাওয়ার আগে আমার পরিবারকে বলেন- আমার(রবিউল) থেকে দূরে থাকতে এবং দ্রæত করোনা টেস্ট করতে। আমি করোনা সাসপেক্টেড! আমার সব রির্পোট একটু নেড়ে-চেড়ে আরো বলছেন উনার বুকের এ-´রেতে কোন সমস্যা পাওয়া যায় নাই। যে মানুষ বমি, ডাইরিয়া ও ১০৫ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, তাকে করোনা ভাইরাস মারতে পারবেনা! সুতরাং দূরত্ব বজায় রেখে আপনারা বাঁচুন।

এতক্ষন শুনলেন সার সংক্ষেপ। আসুন প্রথম থেকেই একটু শুরু করি। প্রথম দিন (২ই জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে হঠাৎ ঠান্ডায় শরীর কাঁপতে থাকে। প্রথমে একটি টি-শাট ও একটি শোয়েটার পরিধান করিলাম। এরপরও দেখি কাঁপুনি বাড়তেছে। তখন একটি কম্বল দিয়ে ভাল করে মুড়িয়ে শুয়ে পরলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই জ¦রের আবির্ভাব ঘটলো। আমি সাধারণ জ¦র ঁেভবে নাপা খেয়ে নিলাম। ২য় দিন জ¦রের সাথে সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথা শুরু হলো। পরিবার থেকে স্বেচায় আমি একটি আলাদা কক্ষে অবস্থান শুরু করি। ঐ দিন বিকালে জরুরি ¯¦াস্থ্যসেবার হেল্পলাইনে ফোন করার পর আমাকে জ¦রের জন্য নাপা একস্টেন্ড ট্যাবলেট ও গলা ব্যাথার জন্য বায়োডিন মাউথ ওয়াস দিয়ে কুলি করতে বলেন ও ফেক্সু ফাস্ট নামাক একটি ওষুধ দিয়ে ৩দিন পর জানাতে বলেন। নাপা এক্সটেন্ড খাওয়ার পরও জ¦র কমতে ছিলো না। জ¦র প্রায়ই ১০৪ডিগ্রি থেকে ১০৫ডিগ্রিতে অবস্থান করছিলো। ১০২ ডিগ্রির উপরের গেলে নাপা সাপোজিটর ব্যবহার শুরু করি কিন্তু সাপোজিটর দিলে মাত্র ৪ ঘন্টা পর্যন্ত ১০১-১০২ ডিগ্রিতে নেমে আসতো। ৪-৫ ঘন্টা পর আবার জ¦র ১০৫ ডিগ্রিতে উঠে যেত। কিছুই খেতে পারতাম না, প্রথম ৪দিন পর্যন্ত পানি,ও সামন্য কেক খাই।

৪র্থ দিন থেকে জ¦র, সর্দি, কাঁশি, গলা ব্যথার সাথে যুক্ত হয় বুক বারী মনে হওয়া, বমি, খাবারের স্বাদ ও গন্ধ না পাওয়া, ডাইরিয়া, একটু হাঁটা-চলা করলেই রক্তপাতসহ ডাইরিয়া। ৫ম দিন থেকে উপরের লক্ষনসহ নতুন করে যুক্ত হয় শরীরের প্রতিটি জয়েন্ট ও হাত-পায়ের পেশীতে, চোঁখ ও কপালে প্রচন্ড ব্যথা। হাত-পায়ের পেশীগুলো কাজ না করা, হাত-পা, আঙ্গুল মাঝে মাঝে অবশ হয়ে আসা। বমির সাথে রক্ত যাওয়া। শরীরের পিঠে, কাঁদে গোলাপী ও হালকা লাল রংয়ের রেশ উঠা।

৬ষ্ট দিন পর্যন্ত জ¦র না কমার কারনে আবারও জরুরি ¯¦াস্থ্যসেবার হেল্পলাইনে ফোন করি এবং নতুন লক্ষণগুলো জানানোর পর আমাকে করোনা টেস্ট এবং উপজেলার স¦াস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করে চিকিৎসা নেওয়ার কথা বলেন।
এরপর আমি বুড়িচং উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার মীর হোসাইন মিঠুকে ফোন করি। তিনি আমার ফোন পেয়ে খুব আন্তরিকতার সাথে কথা বলে জানান -উনার এক রিলেটিভ অসুস্থতার কারনে তিনি বর্তমানে ঢাকাতে অবস্থান করছেন। তিনি আরো বলেন -আমি ২দিন পরে হাসপাতালে আসবো, ইমার্জেন্সী হলে অন্য ডাক্তার দেখান, ইমার্জেন্সী না হলে কষ্ট করে অপেক্ষা করুন, আমি এসে আপনার চিকিৎসা করবো। উনার ব্যবহারে আমি মুগ্ধ হলাম।
পরে শারিরক অবস্থার কথা চিন্তা করে বুড়িচং উপজেলা স¦াস্থ্যকমপ্লেক্সে গেলাম সকাল ১১.৪৫ মিনিটে। বুড়িচং উপজেলা স¦াস্থ্যকমপ্লেক্সে একজন মেডিকেল অফিসারকে উপসর্গগুলো জানালে, তিনি বলেন- ইউআর সাসপেক্টেড করোনা। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে, তিনি পেসক্রিপশন করলেন। আমার আগে যারা পেসক্রিপশন করেছে তাদের থেকে ৪০০টাকা করে নিলেন। আমার পরিবারকেও বলেন ৪০০টাকা দিতে। যেহেতু সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছে, এই কথা চিন্তা করে আমার পরিবার উনাকে ৩০০টাকা ভিজিট দিলেন। ১০০টাকা কম দেওয়াতে ডাক্তার বলেন- কম হবে না পুরো ৪০০ টাকাই দিতে হবে বলে টাকাটা ফিরিয়ে দিলেন। তখন আমার পরিবার পুরা ৪০০টাকা দিয়েই পেসক্রিপশনটা নিলেন। ডাক্তার মহোদয় আমাকে চিনতে পারে নাই। আমি আমার সাংবাদিকতার পরিচয়ও দেই নাই। পরিচয় দিলে তিনি হয়তোবা আমার থেকে ভিজিট নিতেন না!
একটি সরকারি হাসপাতালে বসে, হাসপাতাল আওয়ারে কোন ডাক্তার রোগীদের থেকে ভিজিট/পেসক্রিপশন ফি নিতে পারেন কিনা? এবিষয়ে কুমিল্লা জেলার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াতুজ্জামান’র নিকট জানতে চাইলে- তিনি বলেন ঐ ডাক্তার হাসপাতালে থেকে রোগী দেখলে কোন ভিজিট নিতে পারেন না! বিনামূল্যে রোগী দেখার জন্যই সরকার উনাকে বেতন দেয়। আপনি উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বিষয়টি একটু অবহিত করুন। পরে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহন করবো।

আমি অবাক হয়ে গেলাম! যেখানে শেরপুরের ঝিজানইগাতীর ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিন তার ভিক্ষা করে জমানো ১০ হাজার টাকা করোনোয় ঘরবন্দী কর্মহীন মানুষের খাদ্য সহায়তার জন্য ইউএনওর তহবিলে দান করে। আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের গরীব ও কর্মহীন হয়েপড়া মানুষের কথা ভেঁবে ও মানুষগুলো যেন অনাহারে না থাকে, তার জন্য কয়েকবার অনুদান ও উপহার গরীব ও অসহায় মানুষের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। অপরদিকে এই করোনার ক্লান্তিলগ্নে একজন সরকারি বেতনভুক্ত ডাক্তার হাসপাতালে বসে, হাসপাতাল আওয়ারে পেসক্রিপশন করে- প্রতিরোগী থেকে ৪০০টাকা করে ভিজিট আদাঁয় করছেন! উপজেলা হাসপাতালগুলোতে সাধারণত চিকিৎসার জন্য গরীব ও অসহায় মানুষগুলোই বেশী আসে।
ডাক্তার সাহেব আপনার কাছে চারশত টাকা এই করোনা মুহূর্তেও সামান্য মনে হতে পারে কিন্তু কর্মহীন হয়ে পরা মানুষের কাছে এই চারশত টাকা অনেককিছু! এই চারশত টাকা দিয়ে একটি পরিবারের ২দিনের খাবারের যোগান দিতে পারেন। করোনার ক্রান্তিলগ্নে গরীব ও অসহায় মানুষের কষ্টার্জিত টাকা, আপনি দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন। আপনি শিক্ষিত হয়েছেন, কিন্তু সুশিক্ষিত হননি। ডাক্তার সাহেব আপনি কি মানুষ? এ প্রশ্ন আপনাকে নয়, আপনার বিবেক নামক মহাবিচারকের নিকট পেশ করিলাম। কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে দুর্নীতি ও অনিয়মের টাকার কাছে থাকতে থাকতে আপনার বিবেক ঠিক আছে কিনা?

করোনা টেস্টের জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর জানতে পারলাম- যারা ভোটার আইডি সঙ্গে করে নিয়ে আসেনি, তাদের করোনা টেস্ট করা হবে না। করোনার টেস্ট করতে হলে ভোটার আইডি সঙ্গে নিতে হয়, তা আমার জানা ছিল না। পরে শারিরিক অবস্থা আরো অবনতি হলো এবং খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম টেস্টের ৫দিন পর ফলাফল আসে। আমি চিন্তা করলাম পরের দিন যদি ভোটার আইডি নিয়ে গিয়ে করোনার টেস্ট করি, তাহলে ৭তম দিনে টেস্ট হবে। টেস্টের ফলাফল আসতে ৫দিন লাগলে,তাহলে আমি ১২তম দিনে ফলাফল পাবো। করোনায় আক্রান্তের ১২তম দিনে করোনা টেস্টের ফলাফল পেলে, এ ফলাফল আমার কোন কাজে আসবে না! এই কথা ভেবে করোনা টেস্টের চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে ৩৬বিসিএস অংশগ্রহন করে স্বাস্থ্য ক্যাডারপ্রাপ্ত আমার বন্ধু ডা. আজরিন আক্তারকে ফোন দিয়ে ঐদিন আমার উপসর্গগুলোর কথা জানালে, সে আমাকে বলেন..তোমার লক্ষনগুলো ডেঙ্গু ও টাইফয়েডের উপসর্গ মনে হচ্ছে। আমরা ডাক্তাররা এখন শুধু করোনার পেছনেই ছুটছি, তুমি এক কাজ কর। তুমি ডেঙ্গু, টাইফয়েড, সিভিসি টেস্ট ও বুকের এ-ক্সরে করে আমাকে জানা। আমি বললাম ডেঙ্গু টেস্ট কি হাসপাতালগুরোতে সহজে করা যায়? তারপর ডা.আজরিন আমার হয়ে কষ্ট করে কুমিল্লার কয়েকটি হাসপাতলে ডেঙ্গু টেস্টের খবর নেয়। ফোন দেওয়া হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে ডেঙ্গু টেস্ট হয় না , সে আমাকে অবহিত করে।

পরে ডেঙ্গু, টাইফয়েড এবং বুকের এ-ক্সরে করার জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনিস্টক সেন্টারে ঘুরতে থাকি, যেখানেই যাই আমার জ¦র ও অন্যান্য উপসর্গের কথা শুনে ‘করোনা রোগী’ মনে করে কোন হাসপাতাল ও ডায়াগনিস্টক সেন্টারই পরীক্ষা করতে রাজি হচ্ছিল না।
হাসপাতাল ও ডায়াগনিস্টক সেন্টার ঘুরতে ঘুরতে আমার পরিবার খুব হতাশ হয়ে গেল। ভাবতেছে কোথাও মনে হয় টেস্টগুলো করতে পারবে না। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করি, তাই সহজে পরিস্থিতি আঁচ করার সক্ষমতা আছে, তখন আমি আমার পরিবারকে বলেছিলাম -এভাবে আগামী ২ দিন ঘুরলেও কোন পরীক্ষাই করতে পারবে না। যদি পরীক্ষাগুলো করতে চাও, তাহলে অলি-গলির ছোট-খাট কোন ডায়াগনিস্টক সেন্টারে যাও- যাদের টাকার খুব প্রয়োজন ও সামান্য মানবতাবোধ আছে। আমার কথায় গুরত্ব দিয়ে গলির ভেতরে একটা ছোট ডায়াগনিস্টক সেন্টারে গেল। ঐ ডায়াগনিস্টক সেন্টার আমার পরীক্ষাগুলো করতে রাজী হলো। কিন্তু টাকা ৩গুন বেশি। যাইহোক নাই মামার চাইতে কানা মামা অনেক ভাল! পরীক্ষায় ডেঙ্গু ও টাইফয়েড এর রিপোর্ট পজেটিভ আসলো।

পরে বন্ধু ডা. আজরিনকে জানালাম, সে বললো তুমি রিপোর্টগুলো নিয়ে কোন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাও। শরীরে জ¦র থাকার কারনে ও করোনার ভয়ে কয়েকজন ডাক্তার আমাকে দেখতে রাজী হলো না। বুড়িচং হাসপাতালের ডাক্তার দিয়ে করানো পেসক্রিপশনটাতে করোনাকে প্রায়োরিটি দিয়ে ঔষুধ লিখেছিল। তাই ঐ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের ঔষুধগুলো কিনতে আমি নিষেধ করলাম। পরীক্ষার রিপোর্টগুলো নিয়ে কোন ঔষুধ ছাড়াই বাড়ী ফিরলাম।

পরে আমার এক রিলেটিভ ঢাকার একটি স্বণামধন্য হাসপাতালে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. নুরজাহান সুলতানা ইমার শরণাপন্ন হই। তাকে আমার পরীক্ষার সকল রিপোর্টগুলো ও আমার শরীরের কাঁদে ও পিঠে গোলাপী ও হালকা লাল রংয়ের উঠা রেশগুলোর ছবি পাঠালে, তিনি আমাকে ডেঙ্গু, টাইফয়েড ও করোনা পজেটিভ ধরেই ঔষুধ দেন। উনার নির্দেশনা অনুসারেই অন্যান্য ঔষুদের সাথেই করোনার জন্য ২টি আইবেরা একসাথে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন জিংক, বিকোজিন, সিভিট ও প্রচুর পরিমানে পানি খাওয়া শুরু করি।
৭ম দিনে এসে অন্যের সাহায্য বা লাঠি ছাড়া হাঁটতে পারতাম না। জ¦র কমে নাই। পরে আমার বড় আপু একজন ডাক্তারের সাথে -আমার বিষয়ে আলোচনা করে । তিনি অন্যান্য ঔষুধ সব ঠিক আছে বলেন। অন্যান্য ঔষুধের সাথে জ¦র ১০২ডিগ্রির উপরে উঠলে ভোল্টালিন ৫০এমজি সাপোজিটর ব্যবহার করতে বলেন। পরে আমার চিকিৎসক ডা. ইমার সাথে ভোল্টালিন সাপোজিটর ব্যবহারের বিষয়ে কথা বললে, তিনি বলেন এটা খুব পাওয়ারফুল সাপোজিটর। আপনি যেহেতু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ,তা ক্ষতিকর হতে পারে।

৭তম দিনেও শরীরের কোন উন্নতি এবং জ¦র না কমায় খুব হতাশায় পড়ে যাই। কারণ ৭ দিন হলো তবুও আমার প্রায়ই সময় জ¦র থাকে ১০৫ ডিগ্রি। জ¦র ও বমির প্রভাবে পানি ছাড়া অন্য কোন খাবারও খেতে পারতাম না। আক্রান্তের ৭দিন মিলে মোট এক প্লেট ভাতও খেতে পারি নাই! আমার মনে হলো-শরীরের ফ্যাট (জমাকৃত চর্বি) পুরাইয়া আর বেশিদিন বাঁচবো না। তখন আমার পরিবারকে ডেকে সাবলীল ভাষায় বলে দেই- আমি মারা যাওয়ার পর কেউ দাফন-কাফনে করোনার উপসর্গ নিয়ে আপুত্তি তুললে ‘বিবেক’ সংঘঠনের মাধ্যমে দাফন-কাফন সম্পন্ন করার জন্য। বিবেকের নাম্বারও অনলাইন থেকে সংগ্রহ করে পরিবারের ফোনে সেভ করে দেই। আমার অনুউপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ্য অসম্পন্ন কাজ গুলো সম্পন্ন করার দিকনির্দেশনা ও উপায় বলে দিয়েছিলাম। সাবার নিকট বিদায়ও নিয়ে নিছিলাম। পরিবারের লোকজনের চোঁখে পানি ও কান্না আসছিল কিন্তুু আমি তখনও কোন কান্না করি নাই-সাবলীল ভাষায় সব বলে দিয়াছি। কারণ মৃত্যু নিয়ে আমার কোন ভয় ছিল না! মৃত্যুর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম।

৭তম দিনের বিকাল বেলায় ভোল্টালিন সাপোজিটর ব্যবহারের বিষয়ে বন্ধু ডা. আজরিনকে ফোন দিয়ে তার পরামর্শ নিলাম। সে জানালো ভোল্টালিন সাপোজিটর ব্যবহার করতে পারিস কিন্তু ২৪ ঘন্টায় একটির বেশি ব্যবহার কোন ক্রমেই করা যাবে না। একটানা সাত দিন জ¦র ছাড়েনি, তাই একটু ঝুঁকি নিয়ে ভোল্টালিন সাপোজিটর ব্যবহার করিলাম। এই সাপোজিটরটি দেওয়ার আঁধা ঘন্টার মধ্যেই জ¦র ১০৫ ডিগ্রি থেকে কমে ১০০ ডিগ্রিতে আসলো। প্রায় ঘন্টা খানেকের মধ্যেই অনুভব করতে ছিলাম আমার হাত-পায়ের পেশী ও জয়েন্টের ব্যথা কমে যাচ্ছে। হাত-পা নাড়াতে কোন সমস্যা হচ্ছিল না। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই ভোল্টালিন সাপোজিটরটি ম্যাজিকের মতো কাজ করতেছিল। অন্যের সাহায্য কিংবা লাঠি ব্যতিত আমি দাঁড়াতে পারতাম না কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে আমার মনে হলো আমি দাড়াতে পারবো,পরে আমি নিজে নিজে দাঁড়াতে পারলাম। একটু পর দেখতেছি আমি নিজে নিজে হাঁটতে পারতেছি। পরিবারের লোকজনও সাপোজিটরটি ম্যাজিকে অবাক হয়ে যাচ্ছে। ঘন্টা তিনেকের মধ্যেই আমি আগের মতই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পেয়েছি মনে হলো এবং পেটে ক্ষুদা অনুভব করে পরিবারকে বললাম খাবার দিতে। টানা ৭ টি দিন ধরে আমাকে পরিবারের লোকজন নানান কিছু খাওয়ানোর অনেক চেষ্টা করেছিল, কিছুই খাইতে পারছিলাম না। আর এখন নিজেই বলছি খাবারের জন্য.. পরিবারের সবাই তো অবাক! সাথে নাপা এক্সটেন্ড ৩বেলা ও অন্যান্য ঔষুধ চলতে থাকলো। সাপোজিটরটি আমাকে ১৮ ঘন্টা ব্যাকআপ দিলো। বাকি ৬ঘন্টা আবার পূর্বের ন্যায় জ¦র। ৮ম দিনও সাপোজিটর ব্যবহার করলাম কিন্তু নাপা একটেন্ড বন্ধ করার পর আবার ৭-৮ ঘন্টা পরই পূর্বের ন্যায় জ¦র আসে।

এরই মধ্যে কুমিল্লা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এড.আমিনুল ইসলাম টুটুল জানতে পারেন -আমি (রবিউল) অসুস্থ। তিনি আমার অসুস্থতার খবর জানার পর থেকে অনলাইনে আমার শারিরিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রায়ই খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেন। মনোবল দৃঢ় রাখার জন্য অনুপ্রেরনা দিলেন। আমার মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্য চেয়ারম্যান টুটুল ভাই ইউটিউব থেকে অসংখ্য রোমানটিক গান ডাউনলোড করে আমার ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়েছিলেন। আমি যেন সেগুলো দেখে মন ফ্রেস রাখতে পারি। তিনি বলেও দিয়েছেন এই সময়ে রোমান্টিক গান ছাড়া অন্য গান যেন না শুনি।
আমি মনে মনে উপলব্দি করলাম -একজন উপজেলা চেয়ারম্যান কত বড় মন-মানসিকতার মানুষ হলে, আমার মতো একজন সংবাদকর্মীর সুস্থতার জন্য নিজে সময় ব্যয় করে, ইউটিউব থেকে গান ডাউনলোড করে আমাকে ম্যাসেঞ্জারে পাঠায়! এগুলো ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া! স্যালুট নেতা। আল্লাহ যেন আপনাকে মানুষের কল্যানে কাজ করার জন্য সুস্থ রাখে এবং দীর্ঘায়ু দান করেন।
পরে গত ১৫ জুলাই চেয়ারম্যান টুটুল ভাই আমাকে দেখতে ও চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে বুড়িচং উপজেলায় আমাদের পুরাতন বাড়িতে আসেন। আমার চিকিৎসার ব্যয়ভার প্রদান করেন। এসময় সঙ্গে ছিলেন দৈনিক রুপসী বাংলা পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক এম.এইচ মনির। তাদেরকে পেয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম! বুঝতে পারলাম যে- টুটুল ভাই আমাকে খুব ¯েœহ করেন ও ভাইয়ে অনেক বড় মনের মানুষ! তা-নাহলে একজন জনপ্রিয় সম্মানী চেয়ারম্যান শত ব্যস্ততার মাঝে, অসংখ্য কাজ ফেলে রেখে একজন সংবাদকর্মীকে দেখতে এক উপজেলা থেকে সময় ব্যয় করে অন্য উপজেলায় যায়?
ফেসবুকে পরিচিত একজন ডা. আপুও ২-৩ ঘন্টা পর পর আমার শারিরিক অবস্থা মনিটরিং করেছেন। কখন কি করা প্রয়োজন ও কি খাওয়া উচিত তা বলে দিতেন। নিদিষ্ট সময়ে প্রয়োজনীয় ঔষুধ খেয়েছি কিনা তা প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর নিয়েছেন। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

৯ম-১০ম দিনেও অন্যান্য ঔষুধের পাশাপাশি ভোল্টালিন সাপোজিটর ব্যবহার করেছি। এগারতম দিনে আর জ¦র আসেনি তাই নাপা ও ভোল্টালিন সাপোজিটর ব্যবহার বন্ধ করে দেই। ১২তম দিনে পড়ি অন্য আরেক সমস্যায়। আমার শরীরের তাপমাত্রা থার্মোমিটার দিয়ে মেপে দেখি ৯৩ ডিগ্রি থেকে ৯৪ ডিগ্রিতে অবস্থান করছে। পায়খানার সাথে রক্ত যাচ্ছে। পরে আমার চিকিৎসক ঢাকার ডা. ইমাকে ফোন করে জানাই। তিনিও আমার তাপমাত্রা কমে যাওয়াতে টেনশনে পড়ে যান । আমাকে কয়েক বার ফোন করেন এবং অন্য থার্মোমিটার দিয়ে মেপে আবারো তাকে জানাতে বলেন। অন্য থার্মোমিটার দিয়ে মেপেও শরীরের তাপমাত্রা ৯৩ডিগ্রি পাই। পরে তিনি আমাকে বলেন জ¦র চলে যাওয়ার পর আপনি সম্পুর্ণ্য সুস্থ মনে করে হাঁটা -চলাফেরা ও বেশি নড়া-চড়া করেছেন। এর ফলে আপনার শরীরে ডেঙ্গু জ¦রের প্রভাবে রক্তে প্লাটিনাম কমে গেছে -ফলে আপনার শরীরের তাপমাত্রাও কমে গেছে। আমাকে সাবধান করেও দেন যে জ¦র চলে যাওয়ার পর কিছুদিন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীরা মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকে। যে কোন সময় প্লাটিনাম কমে মারা যেতে পারেন। তাই আগামী ১৪দিন আপনি বেড রেস্টে থেকে পুনরায় ডেঙ্গু ও টাইফয়েড টেস্ট করাতে বলেন। গত ৮ আগস্ট পুনরায় টেস্টগুলো করি। টেস্টে ডেঙ্গু ও টাইফয়েড নেগেটিভ আসে।
আমি অসুস্থ হওয়ার খবর জেনে- অনেকেই আমার জন্য দোয়া করেছেন, খোঁজ খবর নিয়েছেন, আমার অসুস্থতার খবরটি অনেক পত্রিকার সম্পাদক গুরত্বসহকারে প্রকাশ করেছে। তার জন্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পরিশেষে চেয়ারম্যান টুটুল ভাই এবং আমার পরিবারের সদস্য ও শুভাকাক্সক্ষীদের আমার পাশে থাকার জন্য আবারো কৃতজ্ঞতা ও মন থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সবাই ভালো থাকবেন । লেখক- রবিউল হোসেন, সাংবাদিক।।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুনঃ

© All rights reserved © 2024 Jago Comilla
Theme Customized By BreakingNews