1. jagocomilla24@gmail.com : jago comilla :
  2. weekybibarton@gmail.com : Amit Mazumder : Amit Mazumder
  3. sufian3500@gmaill.com : sufian Rasel : sufian Rasel
  4. sujhon2011@gmail.com : sujhon :
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজঃ
কুমিল্লা বাস চাপায় দুই শিশুসহ একই পরিবারের ৪ জন নিহত কুমিল্লায় হত্যা মামলায় সাবেক চেয়ারম্যানসহ  ১৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কুমিল্লার কৃতি সন্তান জাতীয় পতাকার নকশাকার  শিব নারায়ণ দাস আর নেই! যেভাবে ৩১ দিন পর মুক্ত হলো ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ! দলীয় মনোনয়ন না থাকায় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে- এলজিআরডি মন্ত্রী সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন : প্রধানমন্ত্রী দেবিদ্বারে অপহরণের পর যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ; সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক দৈনিক আজকের জীবনের আয়োজনে কুমিল্লায় সাংবাদিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিল কুমিল্লায় দরজা ভেঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার ট্রেন দুর্ঘটনা: একসাথে ঈদের কেনাকাটা হলো না ১১ বন্ধুর, না ফেরার দেশে ৩ বন্ধু

কুমিল্লার দুই বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা!

  • প্রকাশ কালঃ মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২০
  • ৭৬৪

দুজনই মায়ের সূত্রে আমার পরম আত্মার আত্মীয়। একজন কুমিল্লা মুক্ত দিবসে প্রথম আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলনকারী এডভোকেট আহমদ আলী নানা, আমার মায়ের প্রিয় আহমেদ আলী চাচা এবং আরেকজন একজন আমার মেজো খালু বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. জয়নাল আবেদীন|

কুমিল্লার এই দুই বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে তাঁদের বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। গতকাল খালুর মৃত্যুর খবর পাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আহমদ আলী নানার মৃত্যু সংবাদ কানে এলো! নানার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ট সহচর ছিলেন তিনি, ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, ভাষা সৈনিক, প্রাদেশিক পরিষদের সাবেক সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তিনি বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবি ছিলেন। গনপরিষদ সদস্য ছিলেন।বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবার আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদে তাঁকে সদস্য করেছিলেন। এই মানুষগুলোর রাজনীতি দেখার সুযোগ হয়নি, কিন্তু সাহচর্য পাওয়ার কারণে অনেক কিছু জানতে পেরেছিলাম তাদের কাছ থেকে। তাদের কাছে জাতি চির ঋণী থাকবে, কুমিল্লাবাসী তো বটেই।

এইভাবে মানুষগুলো চলে যাওয়াতে আমরা যে কি শূন্যতার মাঝে পড়তে যাচ্ছি, তা কেবল সময়ই বলে দেবে। তাঁকে হারিয়ে কুমিল্লা আসলে একজন অভিভাবক হারালো। তাঁদের কাছে পরবর্তী প্রজন্মের অনেক শেখার আছে| বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ট সহচর কিংবা এতসব রাজনৈতিক পরিচয়ের মাঝেও কিভাবে নিজেকে সাধারণ মানুষ হিসেবে ভাবতে হয়, উপস্থাপন করতে হয় তা দেখেছি পারিবারিক পরিসরে উনার বিভিন্ন সময়ের উপস্থিতিতে। আজকের দিনে যখন হুমকি ধামকি, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক পরিচয়ের হুংকার, হুন্ডা বহরের হুংকারে প্রতিধ্বনিত অহংকার সাধারণ মানুষকে আতংকিত করে তোলার যে রাজনৈতিক শো ডাউন চলে, সেখানে কি ছিল তাদের মায়া, কি তাদের শিক্ষা, কি তাদের নিরহংকারী পথ চলা- এসব আর এই ডিজিটালাইজড যুগে কোথায় পাবো? হারিয়ে যাচ্ছেন শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞ মানুষজন, শূন্য হচ্ছি আমরা….. ওপারে ভালো থাকবেন, নানা। সুদূর ইংল্যান্ড থেকে এই দোয়াই করছি। আমি নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান ভাবি সবসময় কারণ আমাদের পরিবারে অনেকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আছেন বলে কিন্তু তারা সবাই এক এক করে চলে যাচ্ছেন….প্রায় পাঁচ বছর আগে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা নানা মাস্টার মোসলেম সরকার, এর পর বছর খানেক আগে আমার সেজো খালু মুক্তিযোদ্ধা আরিফুল ইসলাম ভুঁইয়া চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে, এর কিছুদিন পর আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় ভাই (আমাদের কাজিনদের মাঝে তিনি সবার বড়) , আমার চাচাতো ভাই নজরুল ইসলাম খান মারা গেলেন, তিনিও বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দুই বছর আগে আমার শ্বশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হকও চলে গেলেন আমাদের ফেলে| আজ চলে গেলেন আমাদের পরিবারের সবচেয়ে সাহসী, আত্মবিশ্বাসী, বেশ আত্মপ্রত্যয়ী মানুষটি, আমার মেজো খালু বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. জয়নাল আবেদীন, তিনি শহীদ মোঃ ওয়াজির আলীর সন্তান। একমাত্র পুত্র সন্তান চলে গিয়েছিলেন যুদ্ধে, ফিরে এসে দেখেন পাক বাহিনীর হাতে বাবা শহীদ হয়েছেন|

এই সব মুক্তি পাগল মানুষগুলো ছিল বলেই আজ আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি। আপনাদের কাছে জাতি চির কৃতজ্ঞ থাকবে। তার কাছে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক কারণে ঋণী, সম্ভবত তাঁর কাছ থেকে বুঝে না বুঝে ছোটবেলাতেই শিখেছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসী উচ্চারণ করার প্রয়োজনীয়তা। অসম্ভব কঠিন ব্যক্তিত্বের প্রফেসর ছিলেন তিনি। ছাত্ররা তাঁকে ‘বাংলার বাঘ’ ডাকতেন, কখনো উনার গলা শুনতে পেলেই বলতেন বাংলার বাঘের গর্জন শুনা যাচ্ছে, খবরই আছে আজ! ভিক্টোরিয়া কলেজের নাম করা এই প্রফেসরের ভাগ্নী ছিলাম বলে কলেজে শিক্ষক মহল ও বন্ধু মহলে একটু বেশি খাতির পেতাম। তবে ভাগ্নি হলেও আমিও ভয়ে কোনোদিনই কলেজের ক্যাম্পাসে উনার আসে পাশে যাইনি যেন বাসার বাইরে আমি উনাকে চিনতাম না। সেই সময়ে কলেজের শিক্ষক হিসেবে তাঁর যে মান মর্যাদা বোধ, ব্যক্তিত্ব দেখেছি, আজকের দিনে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও তা নেই| শিক্ষকরা কোথায় যেন পরাজিত হয়ে যাচ্ছে সমাজের নীতি নৈতিকতা বোধের কাছে, রাজনীতির কাছে| অথচ উনাদের সময়ে উনাদের নাম শুনলেও আমরা শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধাবনত চোখে তাকাতো| সরাসরি চোখে চোখ রেখে কথা বলতেও ভয় পেতাম| আর আজ তো যুগ পড়েছে, শিক্ষকদের পুকুরে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবার| অন্যদিকে শিক্ষকদের অনেকেই নুসরাতের মতো মেয়েদের যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে পুরো শিক্ষক সমাজকে কলুষিত করে দিচ্ছে| ডঃ জয়নাল আবেদীন শিক্ষক হিসেবে ছিলেন অনন্য| তাঁর সরাসরি ক্লাস আমি পেয়েছি ভিক্টোরিয়া কলেজে পাঠকালীন সময়ে| ওফফ! কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এর মেঘনাদবধ কাব্য পড়িয়েছিলেন, আজও কানে বাজ! কলেজে পড়াকালীন সময়ে সারা বাংলাদেশ জুড়ে মুক্তিযুদ্ধের উপর রচনা প্রতিযোগিতা হলো, আমি তার কাছ থেকে এতো গল্প শুনেছি, সেই গল্প হতেই বঙ্গবন্ধুর উপর লিখে সেইবার প্রথম হলাম! বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সবচেয়ে বেশি গল্প আমি তাঁর কাছেই শুনেছি ছোটবেলায়| স্কুল কলেজ জীবনে ভালো রেজাল্ট করার পেছনে তাঁর উৎসাহ দেয়ার ক্ষমতা ছিল অসীম। তাঁকে আমরা তিন ভাইবোন কখনো খালু ডাকতাম না, মামা ডাকতাম কারণ আমাদের মামা ছিলেন না, মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে মামা মারা গিয়েছিলেন, দেখারই সৌভাগ্য হয়নি | কিন্তু জন্মের পর তিনিই যেন মামা হয়ে উঠেছিলেন আমাদের জীবনে| আমি অনেকটাই অনুগত ছিলাম তাঁর বাংলা সাহিত্যের প্রতি আনুগত্য দেখে| নৃবিজ্ঞান নিয়ে পড়লেও বাংলা সাহিত্যের প্রতি, রবীন্দ্র-নজরুল-জীবনানন্দ-সুকান্ত সাহিত্যের প্রতি আমার যে একটা বিশেষ টান, সেটা মায়ের পরে সম্ভবত তিনিই তৈরি করে দিয়েছিলেন মনের অজান্তে|

আমার একমাত্র ভাই ড. আরিফ মোশের্দ খান যখন ১৯৯০ সালে এস এস সি পরীক্ষার আগে কুমিল্লা জিলা স্কুলের টেস্ট পরীক্ষায় রেকর্ড নাম্বার পেয়ে ফার্স্ট হলো, তিনি আমাদের পরিবারে প্রথম যিনি ঘোষণা দিলেন, তুমি যদি বোর্ডে ফার্স্ট হতে পারো, তুমি যা চাইবে তাই পাবে! ভাইয়া পরবর্তীতে বোর্ডে স্ট্যান্ড করলো প্রথম স্থান পেয়ে। আমরা সবাই অপেক্ষা করছি ভাইয়া কি চায় উনার কাছে! মজার ব্যাপার হলো, উনি উনার ব্যাংক এর ব্ল্যান্ক চেক ভাইয়াকে হাতে দিয়ে বললো, “তোমার আমার যা আছে সবই দিয়ে দিলাম।..

তুমি যা নিতে চাও, নিয়ে নাও!” এখনকার দিনে পরিবারে পরিবারে সন্তানদের রেজাল্ট নিয়ে যখন প্রতিযোগিতা, হিংসা আর জ্বলন দেখি তখন মনে মনে কষ্ট পাই, ভাবি আমরা কতোটা স্বর্গময় পরিবেশ ও পরিবারেই না বেড়ে উঠেছি এই ধরণের মানুষগুলো আমাদের পরিবারে ছিলেন বলে! এতো কথা লিখছি একটাই কারণ, মানুষটির মৃত্যুর সময় আমি অনেক দূরে……দেখতেও পাই নি শেষ বারের মতো। অনেক কষ্ট হচ্ছে, ছোটবেলার সব স্মৃতিগুলো ভেসে উঠছে। আমার মায়াবী খালা আরো আগেই মারা গেছেনা, আজ তিনিও চলে গেলেন। তাঁদের আদালত পাড়ায় যে বাসাটি, সেটি একসময় নানা রঙের ফুলের গাছে সজ্জিত থাকতো, দুপাশ ভরে সারি সারি ফুলের টব, মনে হতো ছোট্ট একটা পার্কে ঢুকে পড়লাম| ফুলে ফুলে সজ্জিত বাড়িটি ছোট বেলায় আমাদের তিন ভাইবোনের মূল আকর্ষণ ছিল, কোথায় বেড়াতে যাওয়া মানে হামিদা খালার বাসায় যাওয়া| কারণ আমার খালা হামিদা আবেদিনের মায়াবী বন্ধন, তাঁর হাতের সুস্বাদু রান্না! এখনো সেই রান্নার স্বাদ ভুলতে পারিনা| আমার কাছে তাঁর রান্নার চেয়েও বেশি লোভনীয় ছিল খাবার সময় পাশে দাঁড়িয়ে থেকে খাবার পরিবেশনের পদ্ধতি| খাবার সময় কখনো নিজে পাশে বসে খাইতেন না, দাঁড়িয়ে থাকতেন, প্লেটের এক তরকারি শেষ হলেই আরেক তরকারি তুলে দিতেন পরম যত্নে, গভীর মায়ায়| এতো যত্ন করে মা-খালা ছাড়া পৃথিবীতে আর কে খাওয়াবে? এখন সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াই, কত বাড়ীতে দাওয়াত খাই, কিন্তু এইভাবে এক এক করে খাইয়ে দেবার মতো মায়া আর খুঁজে পাইনা|

তাদের চার ছেলে, কোনো মেয়ে ছিলোনা বলে এই পরিবারে কাছে থাকার কারণে আমি একটু বেশিই আদর পেতাম…খালা মেয়েদের কোন কিছু পছন্দ হলেই আমার জন্য বা আমার বোনের জন্য কিংবা আমার ছোট খালা ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রফেসর মাসুদা তোফার জন্য কিনে জমাতেন| আমরা গেলেই সেই সব উপহারের ভাণ্ডার খুলে বসতেন| আমরা হৈ চৈ করে সেসব নেয়ার জন্য মজা করতাম, সেসব আনন্দ দেখেই মায়াবী খালা আমার খুশি হয়ে যেতেন| জয়নাল খালুও কম নয় কোন দিক হতে, ছোটবেলায় যেখানেই যেত দেশ বিদেশ হতে চার ছেলের সাথে সাথে আমাদের জন্যও উপহার নিয়ে আসতেন। অত্যন্ত বড় মনের মানুষ ছিলেন, কিন্তু অনেক স্পষ্টবাদী ছিলেন বলে হয়তো উনার কথায় অনেকে কষ্ট পেয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু এটাও সত্য আজকালকার দিনে সব অপকর্মের সাথে জী হুজুরের মতো তাল মেলানোর দিনে তাদের আমাদের খুব প্রয়োজন ছিল|

কিন্তু সময় তো আমাদের প্রয়োজন বুঝবেনা, সময় বুঝে কেবল বয়ে যাওয়া…।। সময়কে খুব বলতে ইচ্ছে, ” ধীরে ধীরে বও না সময়, আরে ধীরে বও, আরেকটু ক্ষণ রও না সময়, একটু পরে যাও| জানি জীবন গল্পের অনেক ধাঁধা, একটু হাসি, অনেক কাঁদা| তবুও হিসাব নিকাশ চুলোয় দিয়ে দুঃখের সঙ্গে আড়ি নিয়ে….ধীরে ধীরে যাও না সময়, আরে ধীরে বও!

লেখক:রাশেদা রওনক খান শিক্ষক-নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুনঃ

© All rights reserved © 2024 Jago Comilla
Theme Customized By BreakingNews