আবু সুফিয়ান
এ কলেজে আর আসবো না মৌখিক এ ঘোষণা দিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ। সোমবার (১৪ জুলাই) কলেজের ডিগ্রি শাখায় বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ ছিলেন প্রফেসর আবুল বাশার ভূঁঞা। রাত ১১টার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশের সহযোগীতায় অধ্যক্ষ ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
কলেজ সূত্রমতে, গত বৃহস্পতিবার ৯ দফা দবি পেশ করেন শিক্ষার্থীরা। দুই কর্মদিবসেশিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যক্ষের সঙ্গে এক সংলাপে আশ্বাসমূলক বক্তব্য ও সুস্পষ্ট রোডম্যাপের না পেয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সংলাপ ভেঙে বের হয়ে আসেন।
এছাড়াও গত ১০ মাস পূর্বে এসব দাবি অধ্যক্ষকে লিখিত ভাবে পেশ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলন। এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপের না পেয়ে ‘এক দফা এক দাবি, অধ্যক্ষের পদত্যাগ চাই’ স্লোগান তুলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের দেয়া ৯ দফা দাবি হলো, কলেজে গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন, ডিগ্রি শাখার জন্য পৃথক ও আধুনিক ক্যাম্পাস স্থাপন, সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার, বহিরাগত, মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বাস ও মাইক্রোবাস সার্ভিস চালু, আবাসিক হল ও আশপাশের হোটেল এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন, সুপেয় পানি, আধুনিক ওয়াশরুম এবং যুগোপযোগী শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আলাদা ফান্ড গঠন, কলেজের সব ধরনের আয়-ব্যয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মফিদুল হাসান পল্লব বলেন, এই কলেজে আমরা গেলে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। অধ্যক্ষ স্যার দরজায় তালা দেন। প্রশাসনের কাছে যাওয়ার আগে কাউকে নিয়ে যেতে হয়। এটা কেমন গণতান্ত্রিক পরিবেশ?
উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ফয়জুন্নেসা হলে শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়। হলের ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে কোনো শিক্ষক থাকেন! মেয়েরা কথা বললে তাদেরকে শোকজ, অভিভাবক ডাক, বৈঠকের ভয় দেখানো হয়। নয় দফার কোনো দাবিই মানা হয়নি। বরং আমাদের নিরাপত্তাহীনতায় রাখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তামিমের ওপর ছাত্রলীগের হামলার এক বছর পার হলেও প্রশাসন তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। এটা সবার সামনে ঘটেছে, মিডিয়াতেও এসেছে। তাহলে এত গোপনীয়তা কেন?
নবাব ফয়জুন্নেসা হলের শিক্ষার্থী সাবরিনা সুলতানা বলেন, হলে পানি নেই। কথা বলেও সমাধান নেই। নয় দফা দাবি জানিয়েও সমাধান নেই। তাই আমরা উনাকে চাইনা। উনি এক বছরেও তামিম নির্যাতনের বিচার করতে পারেনি। যারা নির্যাতন করেছে তাদের শাস্তি দিতে পারেনি। অথচ আমাদের বহিষ্কার করবে বলে হুমকি দিচ্ছে।
আয়-ব্যয়ের হিসাবের অস্বচ্ছতা বিষয়ে শিক্ষক পরিষদের যুগ্ম-সম্পাদক ও বাংলা বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক মো: মুনছুর হেল্লাল জানান, প্রশাসনিক ভবনের ডিজিটাল বোর্ডে এখন সবগুলো খাতওয়ারী নোটিশ দেখাচ্ছে। ওয়েবসাইটে ও দিয়েছে। তবে পদত্যাগের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবদুল মজিদ জানান, অধ্যক্ষ স্যার রাত ১১টা ১০ মিনিটে
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশের সহযোগীতায় অধ্যক্ষ ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এ কলেজে আর আসবো না মৌখিক এ ঘোষণা দিয়েছেন। বিষয়টি মন্ত্রণালয় জানে। প্রশাসনের সকল সেক্টর জানে। দ্রুত নতুন অর্ডার হবে। আমি রুটিন দায়িত্ব পালন করবো। আর্থিক কোন ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। পরীক্ষা-ক্লাস যথানিয়মে চলবে।
Leave a Reply