নিজস্ব প্রতিবেদক:
আজ ১৯ জুলাই রোববার আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এপেক্স ক্লাবস অব বাংলাদেশ তার গৌরবের নিয়মিত পথ চলার ৬০ বছরে পদার্পণ করেছে । ১৯৬১ সালের এই দিনে এপেক্স অষ্ট্রেলিয়ার জোন ১০ এর অধীন তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের করাচী এপেক্স ক্লাবের সহযোগিতায় ঢাকার শাহবাগ হোটেলে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশে এপেক্স আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়।দেখতে দেখতে এপেক্স ক্লাবস অব বাংলাদেশ ৫৯টি বছর পার করে আজ রোববার ৬০ বছরে পা রাখবে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে চলা এই ৫৯টি বছর এপেক্স আন্দোলনের জন্য কখনো কুসুমাস্থীর্ণ ছিল না। ছিল অনেক বন্ধুর পথ। আর বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের স্বল্পন্নোত একটি দেশে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে একটি সংগঠনকে ৬০ বছর ধরে রাখা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। এই কঠিন কাজটি সহজ হয়েছে, এদেশের কিছু উদ্যমী,নি:স্বার্থবাদী,নির্লোভ ও পরোপকারী মানুষের সংবেদনশীল অকৃপন সহযোগিতার মনোভাবের কারণে। তারা সেবা,সৌহার্দ ও সুনাগরিকত্ব এই তিনটি মোটোকে নিজেদের প্রত্যাহিক জীবনের সাথে বিলিয়ে দিতে পেরেছেন বলেই দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও আজ এপেক্স বাংলাদেশ স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল রয়েছে।
এপেক্স বাংলাদেশে কিভাবে এল জানতে চাইলে লুকিং ফরোয়ার্ডস থীমকে সামনে রেখে ২০২০ সালে এপেক্স বাংলাদেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া বর্তমান জাতীয় সভাপতি অধ্যাপক এপে.নিজাম উদ্দিন পিন্টু দেশে এপেক্স আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের সকল এপেক্সিয়ানদের প্রতি অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, সারা বিশ্বে এপেক্স আন্দোলনের অগ্রদূত যদি আমরা অস্ট্রেলিয়াকে বলি, তাহলে নি:সন্দেহে এ কথা আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, বাংলাদেশে এপেক্স আন্দোলনের অগ্রদূত ক্লাব হচ্ছে এপেক্স ক্লাব অব ঢাকা। এ ক্লাবের ইতিহাসের ভিতরই নিহিত রয়েছে এপেক্স বাংলাদেশের শুরুর সামগ্রিক ইতিহাস। ১৯৬১ সালের এই দিনে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের করাচী এপেক্স ক্লাবের সহযোগিতায় ঢাকার শাহবাগ হোটেলে দেশে এপেক্স আন্দোলন শুরু করার জন্য এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের একজন জাঁদরেল এপেক্সিয়ান ঢাকাতে চাকরী করতেন। তার নাম হল এপে.মসিহ মির্জা। এড.আহমেদুর রহমানের সভাপতিত্বে তিনি ঐ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছিলেন। এই সভায় প্রায় ৩৬ জন তরুণ ও উদ্যমী যুবক উপস্থিত থেকে এদেশে এপেক্স আন্দোলণের ভীত গড়ে তোলার জন্য প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।ঐ সভাতেই এপেক্স ক্লাব অব ঢাকা নামে বিশ্বের ইতিহাসে এপেক্স আন্দোলনে আরেকটি ক্লাব আত্মপ্রকাশ করে একই সাথে শুরু হয় বাংলাদেশেও এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা। সেদিন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এপেক্স ক্লাব অব ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে এড.আহমেদুর রহমানের নাম আর প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি হিসেবে সৈয়দ এ.কে.মাহমুদুল হকের নাম প্রস্তাব করলে সভায় উপস্থিত সবাই করতালির মাধ্যমে তাদের অভিনন্দিত করেন। এপেক্স ক্লাব অব ঢাকার প্রতিষ্ঠার পেছনে অবশ্য অষ্ট্রেলিয়ার প্রখ্যাত এপেক্সিয়ান লেন বসম্যানের অবদান ছিল অনন্য।
১৯৬৩ সালের প্রথম দিকে ঢাকা ক্লাব চার্টারশীপ লাভ করে। তখন এই ক্লাব এপেক্স অষ্ট্রেলিয়ার জোন-১০ এর অন্তগর্ত জেলঅ ৭ এর ৪০৮ নম্বর ক্লাব ছিল। ঢাকা ক্লাবের চার্টার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পীকার তমিজ উদ্দিন। অষ্ট্রেলিয়ার প্রখ্যাত এপেক্সিয়ান লেন বসম্যান ঢাকা ক্লাব কে চার্টার সার্টিফিকেট প্রদান করেন ।বর্তমানে চাটার্ড -আনচাটার্ড ক্লাব মিলিয়ে বাংলাদেশে ১৪০ ক্লাব সেবা,সুনাগরিকত্ব ও সৌহার্দ্য(বন্ধুত্ব) মোটো নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচী :
প্রতি বছর এপেক্স বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ ,উদ্দিপনার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হলেও এবার মহামারি করোনার কারণে সীমিত ও পরিশীলিত ভাবে এপেক্সের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি উদযাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে এপেক্স বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচী সম্পর্কে জানতে চাইলে এপেক্স বাংলাদেশের বর্তমান বর্ষের এনওয়াইসিডি এপে.আলহাজ্ব হেলাল উদ্দিন জানান, জাতীয় সভাপতি অধ্যাপক এপে.নিজাম উদ্দিন পিন্টুর নেতৃত্ব ও নির্দেশ এবার আমরা করোনাকে মাথায় রেখে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করেছি। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে,
১. প্রত্যেকটি ক্লাব কমপক্ষে ১টি করে চমৎকার মানবিক সেবা কার্যক্রম করা,
২. পাখির নিরাপদ নীড়,বজ্রপাতের ভয়াবহতা হতে রক্ষা,সুস্বাদু – পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতকরণ,প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৃষ্টির প্রয়াসে ৫ মাস ব্যাপী ‘তালগাছ ‘রোপন কার্যক্রম শুরু করা।
৩. নিজেদের কার্যক্রমের স্মৃতিস্মারক ও এপেক্সের ৫৯ বছর পূর্তিতে এই দিনে ৫৯টি গাছ রোপন অথবা ৬০বছরের পথচলাকে উদযাপনে পরদিনে ৬০টি গাছ লাগানো।
৪. নিজ নিজ এলাকার স্থানীয় পত্রিকা ও জাতীয় পত্রিকায় এপেক্স কার্যক্রম ও মিডিয়া কাভারেজ এর ব্যবস্থা করা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এপেক্স এক্টিভিটি ও নিজেদের ভালোলাগার বিষয়গুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা।
৫. স্ব স্ব ক্লাবের সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, নিজেদের ফেলোশিপবৃদ্ধিতে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে চমৎকারিত্বে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা, নিজেদের মধ্যে সৌহার্দ্য উপহার বিনিময় করা ও দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপন করা।
৬. এপেক্স বাংলাদেশের ৬০ বছরের পথচলায় জাতীয়বোর্ড লিফলেট ও পোস্টার ডিজাইন কম্পিটিশন, এপেক্স এ্যাক্টিভিটি নিয়ে ফটোগ্রাফি ও ভিডিও কম্পিটিশন, এপেক্সের আলোকময় ৬০বছরের পথচলায় সুখস্মৃতি-আনন্দ বার্তা, স্মরণীয় ও কষ্টকর অনুভূতি নিয়ে বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠান, এ্যালবাম, ক্রোড়পত্র, স্মরণিকা ও প্রতিযোগিতার আয়োজনসহ প্রভৃতি।
এপেক্স বাংলাদেশের জাতীয় সভাপতি অধ্যাপক এপে.নিজাম উদ্দিন পিন্টু প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আবারো সকল এপেক্সিয়ানসহ দেশবাসীকে অভিনন্দন ও এপেক্সের পাশে থাকার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে সকল এপেক্সিয়ানদের উদ্দেশ্যে বলেন, আসুন, এপেক্সের এই মহতী দিনটি ও ৬০ বছরের পথচলাকে আমরা নিজ নিজ অবস্থান হতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্য বিধি মেনে উদযাপন করি।-প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
Leave a Reply