অনলাইন ডেস্ক:
২০১৮ সালে আইনজীবীদের এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রশংসা করে বক্তব্য রাখার প্রেক্ষাপটে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়াহিদ সরোয়ার কালামকে। গত রোববার (১১ অক্টোবর) বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মাদ মুনীর হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে’ জড়িত থাকার অভিযোগ এনে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করার কথা জানানো হয়।
কী ধরনের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে কালাম জড়িত ছিলেন জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন সোমবার বলেন, ‘বহিষ্কারের চিঠিতে যা লেখা আছে এর বাইরে আমি কিছু বলতে পারবো না।’কালাম এক সময় জাসদের রাজনীতি করতেন। এ ছাড়া তিনি পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির দুইবারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
কেনো আপনাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে জানতে চাইলে ওয়াহিদ সরোয়ার কালাম বলেন, ‘কী অভিযোগে বহিষ্কার তা আমার জানা নেই। তাছাড়া বহিষ্কারের চিঠিও পাইনি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘আমি এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করে বক্তব্য রেখেছি। এ জন্য দল থেকে আমাকে বহিষ্কার করবে তা আমি মনে করি না। আমি তো ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে বক্তব্য রেখেছি। এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য রাখি। ভোট চোর সরকার বলে বক্তব্য রাখি। এ জন্য আমার বিরুদ্ধে এখনো ৭টি মামলা রয়েছে। দলের জন্য কাজ করার ফল বহিষ্কার বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরীর ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি। আলতাফ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা বলেন, আলতাফ চৌধুরীর সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করে কালামকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ এই কালামই পটুয়াখালী জেলা বিএনপির হাল ধরে রেখেছেন দলের এই ক্রাইসিসকালে।
পটুয়াখালী জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, গত রোববার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের বৈঠক ছিল। বৈঠককালে কালামকে বহিষ্কারের জন্য বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমকে নির্দেশ দেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারই পরিপ্রেক্ষিতে কালামকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এর আগে বঙ্গবন্ধুকে প্রশংসা করে রাখা বক্তব্য লন্ডনে তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়। এরপর তারেক রহমান ভিডিও দেখে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কালামকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধু ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। সেখানে একজন জেলা নেতা দলের হাইকমান্ডের মনোভাব বুঝে বক্তব্য না রাখলে তার জন্য তো দল করা সম্ভব হবে না। সবকিছু বুঝেই চলতে হবে।
বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের বৈঠক শেষে বিকেল সাড়ে ৫টায় গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় গঠনতন্ত্রের ৫ (গ) ধারা মোতাবেক পটুয়াখালী জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়াহিদ সরোয়ার কালামকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।’
বহিষ্কৃত নেতা কালাম অভিযোগ করে বলেন, ‘২০১৮ সালে পটুয়াখালী আইনজীবী সমিতিতে আইনজীবীদের সঙ্গে করা এক মতবিনিময় সভায় কালাম তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রশংসা করে বিভিন্ন আলোচনা করেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেন। তার বক্তব্যের শুধু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রশংসার অংশ কেটে বিএনপির কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই ভিডিও পর্যালোচনা করে গত রোববার তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুকে প্রশংসা করে রাখা সেই অনুষ্ঠানের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
কালামকে বহিষ্কারের কারণ জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু বলেন, জেলা জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া বিএনপির এবং অঙ্গ সংগঠনে গ্রুপিংয়ের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তবে বঙ্গবন্ধুকে প্রশংসা করে ২০১৮ সালে রাখা বক্তব্যের বিষয়ে তাকে বহিষ্কার করা হয়নি।
জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাকসুদ আহমেদ বায়েজিদ পান্না বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। লোকমুখে শুনতেছি। বহিষ্কারের বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে।’
Leave a Reply