অনলাইন ডেস্ক:
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাট স্টেশন থেকে উঠে এসে হিমেশ রেশমিয়ার ঝাঁ চকচকে বলিউডি স্টুডিওতে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। নদিয়ার বোগোপাড়ার বাসিন্দা রানুর জীবনযুদ্ধ সাড়া জাগিয়েছিল সারা ভারত।
মুহূর্তের মধ্যে হয়ে গিয়েছিলেন সোশ্যাল মিডিয়া সেনসেশন। রাতারাতি তারকা বনে গিয়েছিলেন রাণাঘাট স্টেশনের ভবঘুরে রাণু মন্ডল। তবে কয়েক মাস যেতে না যেতেই তিনি চলে গেলেন আঁধারে। ফিরে গেলেন আবার সেই রানাঘাট স্টেশনেই।
ঠিক যেন বাস্তবের মাটি থেকে আকাশে, আবার আকাশ থেকে বাস্তবের মাটিতে। খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, সেই পুরনো দিনের মতোই এখন প্রতিদিন দু’বেলা পেট ভরে দু’মুঠো খেতেই ঘাম ছুটছে তার। কার্যত অনাহারেই দিন কাটছে তার। সেই আগের মতোই মানুষ যা দিতেন, সেই খেয়েই যেমন দিন কাটতো তার। তেমনই চলছে রাণুর আজকের দিন। এখনো তার সম্বল হয়ে দাঁড়িয়ছে পাড়া-প্রতিবেশীদের সাহায্য।
যে সময় রাণুর উত্থান, সেই সময়ই জানা গিয়েছিল, দীর্ঘদিন আগে স্বামীর সঙ্গে কাজের সন্ধানে মুম্বাই গিয়েছিলেন রানু। অভিনেতা ফিরোজ খানের বাড়িতে তিনি কাজও করতেন। সেখানে থাকার সূত্রে হিন্দি বলা এবং শব্দ উচ্চারণে দক্ষতা অর্জন করেন। তারপর নদিয়াতে ফিরে আসার কিছুদিন পর স্বামী চলে যান। বিয়েও হয়ে যায় মেয়েদের।
তবে আশার আলো ছিল, মাসি-মেসো একা হয়ে যাওয়া রানুকে নিজেদের বাড়িটি দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু খাবার সন্ধানে রানু প্রতিদিন হাজির হতে শুরু করেছিলেন রানাঘাট স্টেশনের পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মে।
গত বছর ২৭ তারিখ ওই প্ল্যাটফর্মে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে অতীন্দ্র নামে এক যুবক নিজের মোবাইলে রেকর্ড করেন রানুর কণ্ঠে লতার গান ‘এক প্যায়ার কা নাগমা হ্যায়’। সোশ্যাল মিডিয়ায় তা পোস্ট হতেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় সেই ভিডিও। আর ফিরে তাকাতে হয়নি এই ফুটপাথের গায়িকাকে। সোজা মুম্বাই।
হিমশে রেশমিয়ার নজরে পড়ে যাওয়া। গান রেকর্ড, রিয়েলিটি শো, আরো কত কী… স্পটলাইট তখন সোজা রানুর উপরে। কিন্তু তখনই ছন্দপতন। হঠাৎই যেমন সেলিব্রিটি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন, আবার সেই গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড থেকে মুছে গেলেন তিনি। তার কারণ হিসেবে অনেকেই বলছেন, তার দাম্ভিক আচরণই এর জন্যে দায়ী। সামান্য বিখ্যাত হতেই ভক্তদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা শুরু করেন তিনি।
যে ভক্তদের সৌজন্যে তিনি পরিচিত পেলেন তাদের সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করতে থাকেন গায়িকা। তার সঙ্গে সেলফি তুলতে আসা অনুরাগীর ছোঁয়া তার গায়ে পড়তেই চিৎকার করে উঠেছিলেন, ‘ডোন্ট চাট’ বলে। কিংবা রেল স্টেশনের ভিখারিদের দেখলে ‘আমার ঘেন্না হয়’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
স্বাভাবিক কারণেই যারা তাকে কাজের সুযোগ দিচ্ছিলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাকছিলেন, তারাও দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে আবার দিন বদলে গেল রানুর, অন্ধকার নেমে এলো জীবনে। আলো ঝলমলে গানের জগৎ থেকে আবার রাণু ফিরে গেলেন রানাঘাটের সেই স্টেশন চত্বরেই।
Leave a Reply